ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্ধারিত ৯ জুলাইয়ের ডেডলাইন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য অংশীদাররা গত সপ্তাহান্তে চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য তৎপরতা চালিয়েছে অথবা সময়সীমা বাড়ানোর জন্য জোরালো লবিং করেছে। এদিকে, মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন যে, কিছু দেশ যদি বুধবারের মধ্যে চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারে, তবে তাদের জন্য আলোচনার সময়সীমা আরও তিন সপ্তাহ বাড়ানো হতে পারে।
রবিবার মার্কিন প্রশাসনের ৯ জুলাইয়ের সময়সীমার আগ পর্যন্ত সময়ের কথা উল্লেখ করে বেসেন্ট বলেন "পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা আমরা খুব ব্যস্ত থাকব।"
রবিবার রাতে ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানান, সোমবার ওয়াশিংটন সময় দুপুর থেকে শুল্ক আরোপের চিঠি পাঠানো শুরু হবে। তিনি আগেই বলেছিলেন, ১৫টি বাণিজ্য অংশীদার দেশের জন্য চিঠিগুলো প্রস্তুত রয়েছে এবং তা পাঠানোর অপেক্ষা রয়েছে, পাশাপাশি তিনি ইঙ্গিত দেন যে, কিছু চুক্তি অচিরেই সম্পন্ন হতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, "আমার ধারণা, ৯ জুলাইয়ের মধ্যে বেশিরভাগ দেশই হয় চিঠি পাবে, নয়তো চুক্তিতে আসবে।"
রবিবার দুটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বেসেন্ট পরিষ্কার করে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাণিজ্য অংশীদারদের যেসব চিঠি পাঠাতে যাচ্ছেন, সেগুলো তাৎক্ষণিক শুল্ক হারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। শুল্ক কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে, অর্থাৎ যারা এখনো কোনো চুক্তি স্বাক্ষরের কাছাকাছি পৌঁছায়নি, তাদের এখনো প্রস্তাব দেওয়ার সময় রয়েছে।
বেসেন্ট জানান, ১৮টি মূল বাণিজ্য অংশীদারকে কেন্দ্র করে আলোচনা চলছে, এবং কয়েকটি বড় চুক্তি প্রায় সম্পন্নের পথে থাকলেও অপরপক্ষ থেকে বিলম্ব করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য যে, ট্রাম্প ও তার কর্মকর্তারা একাধিকবার বলেছেন চুক্তিগুলো শিগগিরই স্বাক্ষরিত হবে এবং সেগুলো অনিবার্য, কিন্তু এখনো বাস্তবে সেগুলো সম্পন্ন হয়নি। এ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো গেছে, এবং ভিয়েতনামের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।
ট্রাম্প ও বেসেন্টের সর্বশেষ মন্তব্য এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আলোচনাগুলো এখনো ফলপ্রসূ হয়নি। মার্কিন অর্থমন্ত্রীর ভাষ্যমতে, ওয়াশিংটন তাদের বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করছে, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনায়—যা মোট মার্কিন পণ্যের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ বাণিজ্যের প্রতিনিধিত্ব করে—"বেশ ভালো অগ্রগতি" হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়াও গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপ নিয়ে উদ্বিগ্ন, এবং তারা শেষ মুহূর্তে বাড়তি শুল্ক এড়াতে সময়সীমা বাড়ানোর সম্ভাবনা নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা সম্প্রতি বলেন, জাপান সব ধরনের সম্ভাব্য শুল্ক পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, "ট্রাম্পের শুল্ক এড়াতে চেষ্টা চালানো আরেকটি প্রধান গাড়ি উৎপাদক দেশ হিসেবে জাপান দৃঢ় অবস্থান গ্রহণে প্রস্তুত এবং প্রতিটি সম্ভাব্য পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।"
শুক্রবার, কম্বোডিয়ার সরকার জানিয়েছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি কাঠামোগত চুক্তিতে পৌঁছেছে, যা শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে এবং উভয় দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশ যুক্তরাষ্ট্রে টেক্সটাইল ও ফুটওয়্যার রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কম্বোডিয়ার প্রধান আলোচকদের মতে, ইন্দোনেশিয়া গত সপ্তাহে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যার আওতায় খনিজ সম্পদ, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং বাজারে প্রবেশাধিকারের বিষয়গুলো থাকবে—এবং তা শুল্ক কার্যকরের নির্ধারিত সময়ের আগেই বাস্তবায়িত হতে পারে।
থাইল্যান্ডও তাদের রপ্তানির ওপর ৩৬% মার্কিন শুল্ক এড়াতে শেষ মুহূর্তে মরিয়া উদ্যোগ নিয়েছে—যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য ও শিল্পপণ্যের বাজারে আরও প্রবেশাধিকার দেওয়ার প্রস্তাব এবং জ্বালানি ও বোয়িং এয়ারক্রাফট ক্রয় বাড়ানোর অঙ্গীকার দিয়েছে।
তবে, সবকিছু মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে মার্কেটের বিনিয়োগকারীরা এসব খবরের প্রতিক্রিয়ায় ক্লান্ত—ফলে এই খবরগুলো মার্কেটে বড় ধরনের মুভমেন্ট সৃষ্টি করতে পারেনি।
EUR/USD-এর বর্তমান টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, ক্রেতাদের এখন এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1790 লেভেলে পুনরুদ্ধারের উপায় নিয়ে ভাবতে হবে। কেবলমাত্র মূল্য এই লেভেলে পুনরুদ্ধার হলেই 1.1825-এর লেভেল টেস্ট করার সুযোগ পাওয়া যাবে। সেখান থেকে এই পেয়ারের মূল্যের 1.1866-এর লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হতে পারে, যদিও বড় ট্রেডারদের সহায়তা ছাড়া এটি করা বেশ কঠিন হবে। সবচেয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.1910-এর সর্বোচ্চ লেভেল। যদি এই ইন্সট্রুমেন্টের দরপতন হয়, তাহলে আমি 1.1750-এর এরিয়ায় উল্লেখযোগ্য ক্রয় কার্যক্রমের প্রত্যাশা করব। যদি সেখানে কোনো বড় ক্রেতা সক্রিয় না ঠাকে, তবে এই পেয়ারের মূল্যের 1.1715-এর নিচে নেমে যাওয়া বা 1.1675 থেকে লং পজিশন ওপেন করার জন্য অপেক্ষা করাই ভালো হবে।
GBP/USD-এর বর্তমান টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, পাউন্ডের ক্রেতাদের এই পেয়ারের মূল্যকে 1.3640-এর নিকটবর্তী রেজিস্ট্যান্সে পুনরুদ্ধার করতে হবে। কেবল তখনই তারা এই পেয়ারের মূল্যকে 1.3675-এর দিকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারবে, যা ব্রেকআউট করে মূল্যের উপরের দিকে যাওয়া বেশ কঠিন হবে। সবচেয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.3710-এর লেভেল। যদি এই পেয়ারের দরপতন হয়, তাহলে বিক্রেতারা 1.3600-এর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে। যদি তারা সফল হয়, তাহলে মূল্য এই রেঞ্জের নিচে নেমে গেলে সেটি ক্রেতাদের জন্য বড় ধাক্কা হবে এবং GBP/USD পেয়ারের মূল্য 1.3565 লেভেলে নেমে যেতে পারে, এমনকি 1.3535 পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।